জুমার নামাজের নিয়ত ও নিয়ম | জুমার নামাজ মোট কত রাকাত

জুমার নামাজের নিয়ত ও নিয়মঃ আজকের এই আর্টিকেলে আমি মূলত জুমাবার সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জুমার নামাজের নিয়ত। আপনি যদি এই সমস্ত বিষয় নিয়ে জানার আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক হেল্পফুল হবে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

আমরা যারা মুসলিম ধর্মাবলম্বী রয়েছি তাদের জন্য সাপ্তাহিক এক বিশেষ দিন হচ্ছে শুক্রবার বা জুমাবার। মূলত শুক্রবারে প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান ঈদগাহ কিংবা মসজিদের মধ্যে জুমার নামাজে শরিক হয়ে থাকে।

জুমার নামাজের নিয়ত ও নিয়ম | জুমার নামাজ মোট কত রাকাত
জুমার নামাজের নিয়ত ও নিয়ম | জুমার নামাজ মোট কত রাকাত

অনেক মুসলিম সমাজে বলা হয়ে থাকে মুসলমানদের সাপ্তাহিক দিন যেটা রয়েছে সেটা হচ্ছে শুক্রবার। সাধারণত আমরা সকলেই জানি মুসলমানদের জন্য বাৎসরিক মাত্র দুইটি ঈদ রয়েছে (১) ঈদুল ফিতর /রমজানের ঈদ (২) ঈদুল আযহা / কুরবানীর ঈদ।

প্রত্যেক শুক্রবারে প্রতিদিনের জোহরের নামাজের পরিবর্তে দুই রাকাত জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ। অর্থাৎ যদি কারোর উপর জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার যে সমস্ত শর্ত রয়েছে সবগুলো পাওয়া যায় তাহলে তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ।

সম্মানিত আমাদের ওয়েবসাইটের পাঠক বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদের সাথে যে আর্টিকেলটি উপহার দিবে সেটা হচ্ছে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি আর্টিকেল। যেখানে মূলত আমি জুমার নামাজের নিয়ম এবং নিয়ত সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব।

বিশেষ করে আপনি যদি একজন মুসলিম হন তাহলে আপনার জন্য এইসব বিষয় সম্পর্কে জানা অতি প্রয়োজনীয়। কেননা আমাদের মধ্যে অনেকেই জুমার নামাজের নিয়ত এবং নিয়ম এসব বিষয় জানেনা। তাহলে চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেয়া যাক।

আরো পড়ুনঃ 

জুমার নামাজ কি?

জুমার নামাজ এর আরবি শব্দ হচ্ছে صلاۃ الجمعۃ । এখানে صلاۃ এর বাংলা অর্থ হচ্ছে নামাজ الجمعۃ এর বাংলা অর্থ হচ্ছে একত্রিত হওয়া। যেহেতু এই নামাজ সাপ্তাহিক জামাতের মাধ্যমে আদায় করা হয় তাই এটাকে সালাতুল জুম্মা (صلاۃ الجمعہ) বলে থাকে। 

See also  ঈদের নামাজ কি? ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত। বিস্তারিত

জুমার নামাজের হুকুম কি?

আবার আমাদের মধ্যে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে আসলে জুমার নামাজ ফরজ নাকি ওয়াজিব। কেননা হয়তো আমরা অনেকেই অনেকের কাছে ভিন্ন ভিন্ন মত সময় থাকি কেউ কেউ বলে জুমার নামাজ ফরজ আবার কেউ বলে ওয়াজিব।

আসলে এখানে সঠিকটা কোনটা। মূলত ফরজ এবং ওয়াজিব দোনোটা কাছাকাছি। তাই এখানে সরাসরি আপনি ফরজ ধরে নিতে পারেন। অর্থাৎ জুমার নামাজের হুকুম হচ্ছে ফরজ। (দারুল ইফতা দেওবন্দ)

জুমার নামাজের নিয়ত

যেহেতু আমরা জুমার নামাজের হুকুম কি এটার ভিন্ন ভিন্ন মতফায় অর্থাৎ কেউ কেউ এটাকে ফরজ বলেন আবার কেউ কেউ ওয়াজিব বলেন। তো অনেকে চিন্তা করেন আমি নিয়ত করার সময় ওয়াজিব বলে নিয়ত করব আর নাকি ফরজ বলে নিয়ত করব। তো এই সম্পর্কে আমি এখানে আপনাদের সাথে বিস্তারিত বলবো।

যেহেতু আমি আগেই বলেছিলাম দারুন ইফতার দেওবন্দের ফতোয়া অনুযায়ী জুম্মার নামাজ ফরজ তাই আপনি জুমার নিয়ত করার সময় অবশ্যই ফরজ বলবেন। আপনি নিয়ত মনে মনে করলেই হয়ে যাবে তবে আপনি উচ্চারণ করেও বলতে পারেন।

নিয়ত অর্থ হচ্ছে দিলের এরাদা করা অর্থাৎ মনের ইচ্ছে পোষণ করা। তাই আপনি যদি মনে মনে জুমার নামাজ পড়ার ইচ্ছে পোষণ করেন অর্থাৎ এরাদা করেন তাহলে আপনার জুমার নামাজের নিয়ত সহি শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে আপনি যদি মুখে উচ্চারণ করে করেন তাহলে সেটাও পারবেন যেটা আমি নিচে দিয়ে দিয়েছি।

সুতরাং কেউ যদি জুবান অর্থাৎ মুখে উচ্চারণ করে জুমার নামাজের নিয়ত করে তাহলে কিভাবে করবে? সেটা এখান থেকে জেনে নিনঃ আমি আল্লাহ তায়ালার জন্য জুমার নামাজের দুই রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত করতেছি ওই ইমামের পিছনে যিনি আমার সামনে বাইতুল্লাহর দিকে মূখ করে আছেন।

আশা করি এখানে আপনি জানতে পেরেছেন জুমার নামাজের নিয়ত কি রকম অর্থাৎ কোন ব্যক্তি জুমার নামাজ পড়ার সময় কি ধরনের নিয়ত করতে হয়।

তবে যেহেতু নিয়ত অর্থ মনের ইচ্ছে পোষণ করা সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি নিজের ভাষায় নিজের মনের ইচ্ছা খুব ভালোভাবে করতে পারবেন। তাই আমি আপনাকে বলব আপনি যেন আপনার বাংলা ভাষা হোক কিংবা অন্য ভাষায় আপনি নিয়ত করবেন।

আরো পড়ুনঃ রোজা রেখে নখ কাটা যাবে কি | রোজা রেখে চুল কাটা যাবে কিনা | রোজা রেখে হস্তমৈথুন |

জুমার নামাজের নিয়ম

জুমা হচ্ছে প্রতিটি মুসলমানদের জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় এবং ফরজ নামাজ। এই জুমার গুরুত্ব রয়েছে অনেক এই দিনটি প্রতি সপ্তাহে একবার আসে। এই দিনকে আপনি মুসলমানদের জন্য একটি সাপ্তাহিক দিবসও বলতে পারেন।

See also  কত রমজানে মক্কা বিজয় হয়েছিল।খালিদ ইবনে ওয়ালিদের কৈফিয়ত গ্রহণ।

যে ব্যক্তি সুন্দর ভাবে অজু করে পাক পবিত্র হয়ে মসজিদে গমন করবে জুমার নামাজ পড়ার জন্য। তার এই জুমার আগ থেকে এ পর্যন্ত যত গুনাহ হয়েছে আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।

আমাদের দেশের মধ্যে দেখা যায় যারা কিনা অন্যান্য নামাজ পড়েন না তারাও শুক্রবার অর্থাৎ জুমাবার এ জুমার নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে গমন করেন। যদিও বা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ।

সুতরাং শুক্রবারে যোহরের নামাজের পরিবর্তে দুই রাকাত জুমার নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানদের উপর ফরজ যাদের উপর কিনা শর্ত সমূহ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ যে সমস্ত মুসলমানের উপর জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার শর্ত পাওয়া গেছে তাদের উপর জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ।

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের মধ্যে অনেকেই জানে না সঠিকভাবে কিভাবে জুমার নামাজ আদায় করতে হয় কিংবা পড়তে হয়। তাই এখান থেকে আপনারা জানতে পারেন কিভাবে জুমার নামাজ আদায় করতে হয়।

জুমার নামাজের সময় যোহরের নামাজের পরিবর্তে যেহেতু এই নামাজ আদায় করা হয় তাই এই নামাজ পড়া হবে অন্যান্য দিন যে সময় আপনি যোহরের নামাজ আদায় করেন। অর্থাৎ জোহরের নামাজের সময় যখন থেকে শুরু জুমার নামাজের সময়ও তখন থেকে শুরু।

জুমার দিন গোসল করে পরিষ্কার কাপড় পরিধান করে আযানের সাথে সাথে কিংবা তার আগে মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করা উত্তম।

সর্বপ্রথম জুমার নামাজের আগে অর্থাৎ কাবলাল জুমা চার রাকাত সুন্নত তারপরে খুতবা পড়ার পরে দুই রাকাত জুমার ফরজ নামাজ এবং জুমার নামাজের পরে অর্থাৎ বা’দআল জুমা চার রাকাত সুন্নত পড়া।

আরো পড়ুনঃ ঈদের নামাজ কি? ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত। বিস্তারিত

আরবিতে জুমার নামাজের নিয়ত

আমাদের মধ্যে আবার অনেকে আছে যারা কিনা জুমার নামাজ কিংবা অন্যান্য নামাজের নিয়ত সরাসরি আরবিতে করে থাকে বা করার ইচ্ছে আছে।

তাই অনেকের কাছে ইচ্ছে থাকার সত্বেও কিভাবে আরবিতে জুমার নামাজের নিয়ত করতে হয় সেটা জানে না। তো এই মুহূর্তে আমি আপনাদের সাথে সেটা শেয়ার করব।

তো আপনি যদি আরবিতে জুমার নামাজের নিয়ত কি হবে সেটা জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে এখান থেকে জেনে নিন। আপনার সুবিধার্থে আমি নিচে অর্থও দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরবি-উচ্চারণঃ

نَوَايْتُ اَنْ اُسْقِطََ عَنْ ذِمَّتِىْ فَرْضُ الظُّهْرِ بِاَدَاءِ رَكْعَتَىْ صَلَوةِ الْجُمُعَةِِ فَرْضُ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ

অর্থঃ 

আমার উপর যোহরের ফরজ নামায আদায়ের যে দায়িত্ব রয়েছে, আমি কিবলামুখী হয়ে, জুমা’র দুই রাকাত ফরজ নামায আদায়ের মাধ্যমে তা পালনের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবার।

See also  এশার নামাজ কয় রাকাত | এশার চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ম | রাত ১২টার পর কি এশার নামাজ পড়া যাবে

জুমার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত

আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা কিনা এখনও পর্যন্ত জানেন না জুমার নামাজ কয় রাকাত। না জেনে তেমন কোন দোষের নয় কিন্তু জেনে না নেওয়া দোষের। অর্থাৎ আপনি জানেন না ঠিক আছে কিন্তু জেনেতো নিবেন।

তাই অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান আছে যারা কিনা জুমার নামাজ কয় রাকাত এই বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য গুগল কিংবা ইউটিউব এর মধ্যে সার্চ করে থাকে।

মূলত যে সমস্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা জুমার নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত সম্পর্কে লিখে সার্চ করে থাকে তাদের প্রশ্নের উত্তরই এখানে পেয়ে যাবে। তাহলে চলুন সেটা একটু জেনে যাক।

জুমার নামাজ কয় রাকাতঃ জুমার নামাজ হচ্ছে ১২ রাকাত অর্থাৎ দুই রাকাত জুমার ফরজ নামাজের আগে ৪ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা, ২ রাকাত ফরজ, দুই রাকাত জুমার ফরজ নামাজের পরে ৪ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা এবং সর্বশেষ ২ রাকাত সুন্নতে গায়রে মক্কাদা।

সহজ ভাষায় বলতে গেলেঃ (১) দুই রাকাত জুমার ফরজ নামাজের আগে ৪ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা (২) ২ রাকাত জুমার ফরজ নামাজ (৩) দুই রাকাত জুমার ফরজ নামাজের পরে চার রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা (৪) সর্বশেষ দুই রাকাত সুন্নত গায়রে মুয়াক্কাদা।

বিঃদ্রঃ এমন অনেক কিতাবে বর্ণিত করা হয়েছে যে, সর্বশেষ দুই রাকাত সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদার পর আবার দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া।

জুমার নামাজ মোট কত রাকাত

আবার অনেকেই আছেন যারা কিনা জুমার নামাজ কয় রাকাত এটা এভাবে সার্চ না করে গুগল কিংবা ইউটিউবে অন্যভাবে সার্চ করে থাকেন যেমন জুমার নামাজ মোট কত রাকাত।

সুতরাং আপনারা যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি কিংবা ভিন্ন ভিন্ন টাইটেল এর মাধ্যমে সার্চ করে থাকেন তাই আমাকেও আপনাদের প্রশ্ন তুলে ধরে সেই ভাবেই উত্তর দিতে হয়।

সুতরাং আপনি যদি জুমার নামাজ মোট কত রাকাত লিখে সার্চ করেন তাহলে এই প্রশ্নের উত্তরটা আপনি পেয়ে যাবেন এর উপরের সেকশনে। সুতরাং আপনি যদি এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চান তাহলে এখানে ক্লিক করুন।

আরো পড়ুনঃ

ইমামের পিছনে জুমার নামাজের নিয়ত

এই বিষয়টা সম্পর্কে যেহেতু আমি বিস্তারিতভাবে জানিনা তাই আপনাদের সাথে আমি শেয়ার করতে অক্ষম। তার জন্য আপনারা আপনার আশেপাশের কোন একটা অভিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ নিতে পারেন।

অর্থাৎ আমি যেহেতু এই বিষয়টা বিস্তারিত ভাবে জানি না তাই আমি এখানে শেয়ার করতে পারতেছি না। সুতরাং আপনারা আপনার আশেপাশের কিংবা পরিচিত কোন একজন আলেম কিংবা এমন লোক যায় কিনা এ বিষয় সম্পর্কে জানিয়ে তার থেকে জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন।

Leave a Comment