তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল | তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফলঃ- তাহাজ্জুদ এটি একটি আরবী শব্দ এর বাংলা অর্থ হচ্ছে ঘুম থেকে জাগা। আমরা তাহাজ্জুদ নামাজ কিংবা রাতের নামাজে যাই বলি না কেন এটা হচ্ছে একটি নফল ইবাদত। ফরজ ইবাদত অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর অন্যান্য সকল নামাজ সুন্নত,নফল ইত্যাদি সবকিছুর চেয়ে উত্তম নামাজ হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজ। অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মধ্যে অন্যান্য ফল কিংবা সুন্নাতের চেয়ে ফজিলত ও গুরুত্ব বেশি রয়েছে।


তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল | তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল | তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

নবী করীম সা. যুগে যখন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়নি তখন তাহাজ্জুদ নামাজ হযরত মুহাম্মদ সা. এর ওপর বাধ্যতামূলক ছিল। তাই হযরত মুহাম্মদ সা. এর জীবদ্দশায় একবারের জন্য হলেও তাহাজ্জত নামাজ কাজা হয়নি।

আমরা সকলেই জানি সুন্নত হচ্ছে দুই প্রকার (১) সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (২) সুন্নাতে গাইরে মুয়াক্কাদা। এখানে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলতে যেটা পড়া আবশ্যক যেটা ছেড়ে দেওয়ার কারণে গুনা হয় আর সুন্নাতে গাইরে মুয়াক্কাদা হচ্ছে যেটা পড়া আবশ্যক নয় ছেড়ে দিলে কোনো অসুবিধে নেই।

ঠিক তদ্রূপ উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ হচ্ছে একটি সুন্নত যেটা কিনা সুন্নাতে গাইরে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ ছেড়ে দিলে কোন অসুবিধা নেই যদিওবা অনেক লাভ এবং অনেক নেকী রয়েছে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে।

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল তাহাজ্জুদ নামাজ এই অর্থে সুন্নত যে এটা রাসূল সাঃ করেছেন।
আয়তুল কুরসি পাঠ করলে উপকারিতা ক্লিক করুন
আয়াতুল কুরসি আরবি ও বাংলা উচ্চারণ ক্লিক করুন

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল | Tahajjud namaz is Sunnah or Nafl

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফলঃ- তাহাজ্জত নামাজ হচ্ছে একটি সুন্নত নামাজ কারণ এটা হযরত মুহাম্মদ সা. পড়েছেন। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যদি কেউ রাসুল সা. এর আমল অনুকরণ করে তাহলে এটা সুন্নত হিসেবে গণ্য হবে। আর ফরজ ব্যতীত যে সমস্ত অন্যান্য ইবাদত রয়েছে সবগুলো নফল ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত তাই আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে ফরজ হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন সুতরাং নফল নামায ফরয নামাযের মত হুকুমের মধ্যে আসেনি। সুন্নাহ কে ফিকহি ওলামায়ে কেরামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন এখানে হুকুম অর্থ হচ্ছে বিধান।

আমরা সকলে জানি হযরত মুহাম্মদ সা. এর জন্য হচ্ছে মোট দুই প্রকার তার মধ্যে একটা হচ্ছে ঐ সমস্ত সুন্নাহ যেগুলোর উপর অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আরেকটা হচ্ছে ওই জন্য যেটা অতিরিক্ত সুন্নাহ হিসেবে আমরা পরিচয় দিয়ে থাকি। যেহেতু তাহাজ্জুদ নামাজ ফরজ এবং ওয়াজিব নামাজ এর অন্তর্ভুক্ত নয় তাই এই নামাজকে সে দিক থেকে সুন্নাহ বলা যায় কিন্তু যেহেতু এটা হযরত মুহাম্মদ সা. একবারের জন্যও ছেড়ে দেননি অর্থাৎ আমল করেছেন তাই এটাকে সুন্নাহ হিসেবে গণ্য করা হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত |  Tahajjud namaz niyat and niyom

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম- অনেকগুলো নফল নামাজ আছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন নফল নামাজ হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজ। রাসুল সা. তাহাজ্জত নামাজ কি দুই রাকাত দুই রাকাত করে আদায় করেছেন আবার কখনো কখনো চার রাকাত, আট রাকাত কিংবা বারো রাকাতও আদায় করেছেন।

কিন্তু কোন আল্লাহর বান্দা যদি তাহাজ্জুদের নামাজ দুই রাকাত আদায় করে সেটাও তাহাজ্জুদ বলে গণ্য হবে।হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।”

আমরা সকলেই জানি কোরআন শরীফের মধ্যে 114 টি সূরা রয়েছে আপনি শেখান থেকেই কোন আপনার পছন্দমত সূরা পড়তে পারবেন তাহাজ্জুদ নামাজের মধ্যে। হযরত মুহাম্মদ সা. যথাসম্ভব যথেষ্ট লম্বা কেরাত, রুকু এবং সেজদা সহকারি একান্ত নিবিষ্ট মনে সেই ফজিলতপূর্ণ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই আপনিও যদি তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে লম্বা কেরাত পড়া সহকারে আদায় করেন তাহলে অনেক উত্তম হবে। আপনি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে কেরাত পড়ার সময় আওয়াজ করে ও পড়তে পারেন কিংবা চুপে চুপে উপায়। যদি কারো আওয়াজ করে পড়তে অসুবিধা হয় বা কষ্ট হয় তাহলে চুপে চুপে পড়া কর্তব্য।

নিয়মঃ 

  • সর্বপ্রথম আপনাকে তাহাজ্জত নামাজের নিয়ত বানতে হবে। কিভাবে নিয়ত বাধতে হয় সেটা জানার জন্য নিচে দেওয়া তাহাজ্জুদের নিয়ত টা দেখে নিন। একটু স্ক্রল করার পরেই দেখতে হবে না।
  • তারপর তাকবীরে তাহরীমা (আল্লাহু আকবার) বলে নিয়ত বাধতে হবে।
  • তারপর ছানা পড়তে হবে (سبحانک اللہم۔۔۔۔) 
  • তারপর সুরা ফাতেহা পড়া।
  • তারপর সূরা ফাতেহার সঙ্গে কেরাত পড়তে হবে অর্থাৎ সূরা মিলাতে হবে।
  • তারপর অন্যান্য সাধারণ নামাজের মত রুকু সিজদা করে শেষ করতে হবে। (হুবহু অন্যান্য নামাজের ন্যায় পুরো নামাজ শেষ করতে হবে)

উপরে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী আপনি যদি দুই রাকাত দু রাকাত করে ৮ রাকাত স্মরণ  করেন তাহলে এটা আপনার জন্য উত্তম। (বিশেষ দ্রব্যষ্টঃ আপনি যদি এশারের নামাজ পড়ার পর বিতরের নামাজ শেষ করে ফেলেন তাহলে আর দ্বিতীয়বার তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পরে আবার বিতরের নামাজ পড়ার প্রয়োজন নেই।) বরং আপনি দুই রাকাত দুই রাকাত করে 8 রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার চেষ্টা করবেন কেননা এভাবেই তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া উত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাযের নিয়ত কিভাবে করতে হয়।

আমরা সকলেই জানি নিয়ত অর্থ হচ্ছে মনের ইচ্ছা পোষণ করা। তাই আপনি আরবীতে নিয়ত করার চেয়ে নিজের বাসায় সুন্দরভাবে নিজের ইচ্ছা পোষণ করা অর্থাৎ নিয়ত করা সবচেয়ে উত্তম। তো আপনি বাংলায় কিভাবে নিজের ভাষায় কিভাবে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করবেন এটা জানার জন্য আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

নিয়তঃ আমি (দুই রাকাত, চার রাকাত, আট রাকাত, বারো রাকাত “””এখানে আপনি যত রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েন সেটা বলবেন।) তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ত করছি। উদাহরণস্বরূপঃ আমি যদি দু রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ত কিংবা মনের ইচ্ছে পোষণ করি তাহলে আমাকে বলতে হবেঃ আমি দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ত করছি অথবা আমি দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেছি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত | Tahajjud namaz rakat

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত – আমরা অনেকেই আছি যারা কিনা তাহাজ্জত নামাজ কয় রাকাত এটা নিয়ে জানতে চাই। তো আপনি যদি এই প্রশ্ন করে থাকেন তাহলে এখনি এই প্রশ্নের অ্যানসার জেনে নিন।

তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাত এর উত্তর হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দিষ্ট কোন রাকাত নেই অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাত পড়তে হবে এরকম নেই। দুই দুই রাকাত চার চার রাকাত থেকে শুরু করে আপনার যত ইচ্ছে পড়া যায়। বিভিন্ন আলেম-ওলামাদের মত হলো ন্যূনতম চার রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা। আপনি দুই রাকাত কিংবা চার রাকাত যেভাবেই পড়েন না কেন প্রতিদিন নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা অন্যতম একটি সওয়াবের কাজ। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম

আমাদের মধ্যে যারা মা বোন আছে তারা অনেকে আছে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাই। বিশেষ করে যারা বৃদ্ধা মহিলা রয়েছে তারা বিশেষ করে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে। তো আপনি যদি মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাই তাহলে এখনি জেনে নিন।

মহিলাদের তাহাজ্জুদের নামাজ এবং পুরুষদের তাহাজ্জুদের নামাজ এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই কিন্তু হা সাধারণ ফরজ নামাজ এর মধ্যে মহিলা এবং পুরুষের যে পার্থক্য রয়েছে সেই পার্থক্যই মূলত তাহাজ্জুদ নামাজের মধ্যে আছে। অর্থাৎ মেয়েরা বুকে হাত বাঁধে আর ছেলেরা নাভির নিচে হাত বাঁধে এটাই মূলত হানিফি মাযহাবের মত।

সুতরাং আপনি যদি মেয়ে হয়ে থাকেন তাহলে উপরে উল্লেখিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম যেটা আমি আর্টিকেলের একদম শুরুর দিকে বর্ণনা করেছিলাম সেখান থেকে পড়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে আর্টিকেলটি শুরু থেকে পড়ে আসতে হবে। পার্থক্য শুধু মাত্র ছেলে এবং মেয়েদের নামাজের যে পার্থক্য রয়েছে সেটাই। আলাদা তাহাজ্জত নামাজের মধ্যে পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

যেমন আমরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করি যেটা কিনা প্রত্যেক মুসলমান বানেগা নর-নারীর উপর ফরজ। সেই পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ মহিলা এবং পুরুষ একইভাবে আদায় করে কিন্তু নামাজের নিয়ম এর মধ্যে পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন পুরুষরা নাভির নিচে হাত বাঁধে আর মেয়েরা চিনার ওপর হাত বাঁধে।

তাহাজ্জুদ নামাজ কি প্রতিদিন পড়তে হয়

অনেকে আবার প্রশ্ন করে থাকেন তাহাজ্জুদ নামাজ প্রতিদিন পড়তে হয় কিনা। যেহেতু তাহাজ্জত নামাজ ফরজ ইবাদত নয় তাই এটা প্রতিদিন পড়া জরুরী নয়। তবে আপনি যদি তাহাজ্জুদের নামাজ প্রতিদিন নিয়মিত আদায় করেন সেটাই আপনার জন্য অনেক লাভজনক। কেননা তাহাজ্জুদের নামাজের মধ্যে অনেক ফজিলত এবং সাওয়াব রয়েছে। তো আমি আপনাকে রিকমেন্ড করব আপনি তাহাজ্জুদের নামাজ প্রতিদিন পড়ার চেষ্টা করেন।

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে কি হয়

রাতের নামাজ বা যেটাকে আমরা তাহাজ্জুদ বলে থাকি তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা আপনি যদি মোমিন হয়ে থাকেন এবং তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন তাহলে আপনার মর্যাদা বৃদ্ধি হবে। আপনি যদি আল্লাহর একান্ত প্রিয় বান্দা হতে চান তাহলে নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নবী করিম সা. হাদিসে পাকের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন আমাদেরকে তাহাজ্জুদ নামাজের মধ্যে কি উপকারিতা রয়েছে এবং সর্তকতা সম্পর্কে।

আমরা সকলেই জানি শয়তান হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। তাইতো শয়তান আমাদেরকে অত্যন্ত চেষ্টার মাধ্যমে এবং প্রখর বুদ্ধি খাটিয়ে আমাদেরকে তাহাজ্জুদ নামাজ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করে থাকে এবং আমরাও শয়তানের কাছ থেকে সরে থাকতে পারিনা। তাইতো অনেক প্রকৃত মুমিন বান্দা যারা কিনা শয়তানকে চ্যালেঞ্জ করে রাতের ঘুম হারাম করে আরাম বিছানাকে এড়িয়ে জায়নামাজের মধ্যেই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য রাত কাটিয়ে দেন।

See also  আয়াতুল কুরসি কোন সূরার কত নম্বর আয়াত